Breaking News

6/recent/ticker-posts

সিঙ্গাপুরে ডাক্তার দেখিয়েও সমস্যা খুজে পান নি সাকিব

‘আপনি চশমা পরে যেটা দেখেন, আমি না পরে এর থেকে ভালো দেখি’সাকিব

সিঙ্গাপুরে ডাক্তার দেখিয়েও সমস্যা খুজে পান নি সাকিব


বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (BPL) সিলেট পর্বে শেষ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারিয়ে দারুণ জয় তুলে নিয়েছে রংপুর রাইডার্স। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নিজের ব্যাটিং-বোলিংয়ের অস্বস্তি ও চোখের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাকিব আল হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসানের প্রতি বেশিরভাগ প্রশ্নই হলো তার চোখ ও ব্যাটিং নিয়ে। যেখানে তিনি নিজেও জানেন না সমস্যা কোথায়!

সাকিবের সেই আলোচিত সংবাদ সম্মেলন তুলে ধরা হলো ।

সাংবাদিকঃ  কেমন আছেন?

সাকিব আল হাসানঃ ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।

সাংবাদিকঃ চোখের অবস্থা এখন কেমন?

সাকিবঃ  ভালো আছে।

সাংবাদিকঃ চোখের কারণে ব্যাটিংয়ে আপনার একটু সমস্যা হচ্ছিল। এখন কি স্বস্তি বেড়েছে?

সাকিবঃ হাসি দিয়ে বললেন আপনাকে কে বলছে চোখের জন্য সমস্যা হচ্ছে?

সাংবাদিকঃ গত ম্যাচের পর রংপুরের অধিনায়ক সোহান বলেছিলেন, আপনাকে অনুরোধ করবেন সংবাদ সম্মেলনে আসার জন্য? 

সাকিবঃ অনুরোধ করেনি, অর্ডার দিয়েছে, অধিনায়ক অর্ডার দিয়েছে, চলে এসেছি। হাসতে হাসতে বললেন সাকিব। 

সাংবাদিকঃ গত দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামেননি। আজকে চার নম্বরে নেমেছেন। ব্যাটিংয়ে স্বস্তিটা কি বেড়েছে?

সাকিবঃ এটা তো বলা খুব মুশকিল। আসলে রান যত করব,তত কমফোর্ট লেভেলটা বাড়বে। রান যতক্ষণ না করছি, ততক্ষণ ওই ছন্দ আসবে না, কমফোর্ট জোনটাও থাকবে না। এটা খুবই স্বাভাবিক।

সাংবাদিকঃ কোনো হতাশা আছে? ব্যাটিং করতে না পারা নিয়ে?

সাকিবঃ না!

সাংবাদিকঃ আজকে ব্যাটিংয়ে যেভাবে আউট হলেন, পরে দেখলেন রিভিউ নেওয়ার সময়ও শেষ । তখন কি খারাপ লাগা কাজ করছিল, যে দুই ম্যাচ পর ব্যাটিংয়ে নামলেন কিন্তু! 

সাকিবঃ  বুঝলাম যে, খারাপ সময়ে সবই খারাপ যায় ।

সাংবাদিকঃ দেশের বড় দুই কোচ, সোহেল ইসলাম এবং  মোহাম্মদ সালাউদ্দিন আপনার সঙ্গে কাজ করেছেন। আপনার চোখের একটা বাজে সময় যাচ্ছে? 

সাকিবঃ চোখের বাজে সময় যাচ্ছে!

সাংবাদিকঃ মানে আপনার একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, তাই দুই কোচকে পাশে পেয়ে কেমন লেগেছে? বিশেষ করে সালাউদ্দিন, আপনার ছোটবেলার কোচ? 

সাকিবঃ সবাই চেষ্টা করছে সাহায্য করার। যাতে করে আমি যে সমস্যাটা মোকাবিলা করছি, সেই সমস্যাটা যেন সামাল দিতে পারি।

সাংবাদিকঃ সালাউদ্দিন বলেছেন, আপনি যদি ব্যাটিংয়ে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ না করেন, ব্যাটিংয়ে ফিরতে না পারেন, তাহলে আর ক্রিকেটই খেলবেন না। আপনার কি ভাবনা?

সাকিবঃ আমার এখন পর্যন্ত কোনো ভাবনা নেই। চেষ্টা করছি, আগে চেষ্টা শেষ করি, পরেরটা পরে দেখব।

সাংবাদিকঃ আপনি মূলত একজন অলরাউন্ডার। কিন্তু শেষ কয়েক ম্যাচে বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবেই মূলত খেলেছেন। একজন অলরাউন্ডারের জায়গা থেকে শুধু বোলার হিসেবে খেলা এবং দলের জন্য অবদান রাখা, এটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কতটা কঠিন?

সাকিবঃ জিনিসটা হচ্ছে জীবনে কখনও এরকম করিনি যে, শুধু একটা সাইড দিয়ে খেলতে হচ্ছে। এবারই প্রথম। তবে অবশ্যই রংপুরের জন্য আমার ‘ফিল’ হচ্ছে, কারণ তারা আমাকে যে আশা নিয়ে দলে নিয়েছে, তার অর্ধেক করতে পারছি, অর্ধেক পারছি না।

তারপরও তারা আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ অবশ্যই দিতে হয়। এরকম একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। কারণ তারা যেভাবে আমার যত্ন নিয়েছে, আমার পরিস্থিতি যেভাবে বুঝে ও হ্যান্ডেল করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই।

সাংবাদিকঃ বিপিএল শেষ হওয়ার কিছু দিনের পরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শুরু হবে । আপনি এখন টেস্টে,ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরমেটে অধিনায়ক আছেন, আপনার এখন যে অবস্থা, ব্যাটিংয়েও যেহেতু সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা কতটা চ্যালেঞ্জিং? 

সাকিবঃ এটা আসলে সময়ই বলে দেবে। টুর্নামেন্ট এখনও বাকি আছে। দেখি কী অবস্থা দাঁড়ায়। আর অফিসিয়ালি কথা হবে। এরপর আসলে সিদ্ধান্তটা হবে। 

সাংবাদিকঃ আপনার চোখের বর্তমান যে অবস্থা, আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী এই টুর্নামেন্টে আপনার ব্যাটিংটা আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে? 

সাকিবঃ জানি না! আমার কোনো ধারণা নেই এটা কখন ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এই যে বারবার চোখ. চোখ.. চোখের কথা বলছেন,আমার চোখে কোনো সমস্যা নেই। আপনি চশমা পরে যেটা দেখেন, আমি চশমা না পরে এর থেকে ভালো দেখি। ওই পরীক্ষায় কোনো সমস্যা নেই। কী সমস্যা আছে, তবে সেটা খুজে বের করার চেষ্টা করছি এখনও। 

সাংবাদিকঃ সিঙ্গাপুর গিয়েও কি পাননি সমস্যাটা? 

সাকিবঃ সিঙ্গাপুরে তো চোখ দেখিয়েছি, শরীর দেখিয়েছি । 

সাংবাদিকঃ সমস্যাটা আসলে কোথায় হচ্ছে? 

সাকিবঃ এটাই তো আমিও খুঁজতেছি যে, সমস্যাটা আসোলে কোথায় হচ্ছে। এটা আমি বের করার চেষ্টা করছি। বাকিরাও চেষ্টা করছে।

সাংবাদিকঃ বলা হচ্ছে চাপের কারণে আপনার এই সমস্যা হচ্ছে... 

সাকিবঃ কোন বিজ্ঞ বলেছেন এই কথা?  

সাংবাদিকঃ চিকিৎসকদের কথাই আর কী?

সাকিবঃ কোন চিকিৎসক? 

সাংবাদিকঃ বিসিবি আপনার অবস্থা জানিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল।

সাকিবঃ ওহ আচ্ছা! বিসিবি দিয়েছিল? 

সাংবাদিকঃ সেখানে বলা হয়েছে, আপনার যে সমস্যা, এটা কনজারভেটিভ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হবে। আর এজন্য আপনার মানসিক চাপ ও ক্লান্তি কমাতে হবে। এর মানে তো হলো, চাপের একটা প্রভাব আছে?  

সাকিবঃ জ্বী, সেটা তারা বলছে?

সাংবাদিকঃ আপনি তো এখন বারবার ব্যাটিং ঠিক করার চেষ্টা করছেন। এটা কি চাপ উল্টো বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা? 

সাকিবঃ এটা একটা ভালো প্রশ্ন যে, চাপ বেড়ে যাচ্ছে কি না! মাঝেমাঝে আমারও চিন্তা হয় যে, এটা করলে কি বেশি হয়ে হচ্ছে? নাকি এটা করা ঠিক হবে! এটা কিভাবে বের করব? আপনি বলেন তো, কিভাবে করা উচিত? এখনও কনফিউজড এটা নিয়ে!  

সাংবাদিকঃ এটা কি অনেকটা ট্রায়াল এন্ড এরর-এর মতো হচ্ছে, যে চেক করে দেখি কাজ হয় কি না? 

সাকিবঃ হ্যাৃঁ এখন তো আপনি চেষ্টা করে যদি ঘরে বসে থাকেন,  তারপরে এলেন যে, চেষ্টাই করলাম না! সেটা তো কোনো কিছু হলো না। বোর্ডের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

সাংবাদিকঃ এখনও কি কোনো আলাপ হয়েছে ? 

সাকিবঃ না, এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। 

সাংবাদিকঃ আপনি ব্যাটিংটা যেহেতু করতে পারছেন না, আগের ম্যাচে সাত নম্বরেও ব্যাটিং করেননি। তার আগের ম্যাচে ছিলেন ১১ নম্বরে । এজন্য কি বোলিংয়ে বাড়তি চাপ কাজ করছে, যে ভালো করতেই হবে? 

সাকিবঃ বোলিং কি খুব ভালো হচ্ছে? আচ্ছা, যাক আলহামদুলিল্লাহ। 

সাংবাদিকঃ ব্যাটিং না করায়ই কি বোলিংটা বেশি ভালো হচ্ছে? 

সাকিবঃ না. না.. এই উইকেটে আসলে সব স্পিনারই ভালো বল করছে। আমি যদি বেশি খারাপ করি, দেখতেও তো খারাপ লাগে । ওই কারণে একটু ভালো করার চেষ্টা করেছি। কারণ এখানে সব স্পিনার ভালো বল করছে। যে বল করে, সে-ই উইকেট পাচ্ছে । তানভির আগের ম্যাচে ৪ উইকেট পেল। আজকে তাইজুল ভালো বল করেছে। আমাদের শেখ মেহেদিও  ভালো করেছে, নাবি ভালো করেছে। 

এখন আমি যদি খারাপ বোলিং করি, দেখতে তো কেমন লাগে না? একটা রেপুটেশন তো অবশ্যই আছে, হাহাহা । এ কারণেই একটু চেষ্টা করছি ভালো বল করার । 

সাংবাদিকঃ সিলেট পর্বের শুরুর দিকে আপনি বোলিংয়ে এলে চিত্রটা যেমন ছিল, সেদিকে না যাওয়া যাক, গ্যালারি থেকে যে “ভুয়া ভুয়া” চিৎকার শোনা গেছে। তবে শেষটা যেভাবে আপনাকে দেখে সবাই 'সাকিব' 'সাকিব' করল, এই যে কঠিন সময় থেকে কিভাবে বেরিয়েলেন। 

সাকিবঃ এটা অনেক ইন্টারেস্টিং বিষয়। আমি ওদের যখন “ভুয়া ভুয়া” শুনলাম, ওরা সবাই খুশি হয়ে গেল! তারপরে দেখি সবাই আমার পক্ষে কথা বলছে। আমি বুঝলাম না আসলে ঘটনাটা কী! জোরে হাসি 

সাংবাদিকঃ বিপিএলে দেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

সাকিবঃ আমার কাছে মনে হয়, এটা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। সবাই যেহেতু জাতীয় দলের হয়ে খেলবে,তাই সবাই যার যার জায়গাতেই আছে। আমি মনে করি,তারা ভালো অবস্থায়ই আছে। বিপিএল অনেক কঠিন টুর্নামেন্ট। ভালো ছিল এবং অনেক রান হচ্ছিল। যেটা এবার আসলে হচ্ছে না। এবারের পিচগুলো খুব আদর্শ না। গতবার পিচ ও কন্ডিশন দুটোই ভালো ছিলো। 

স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অনেক বেশি খেলতে খেলতে এক সময় একটু রিল্যাক্সড হয়ে যায়। এরকম একটা টুর্নামেন্টে হয়তো সময় নিচ্ছে। এখান থেকে বিল্ডআপ করে হয়তো বিশ্বকাপে দল ভালো করবে। আমার মনে হয় না, এটা নিয়ে কোন হতাশ বা দুশ্চিন্তার কিছু আছে। আমি নিশ্চিত যারা দলে থাকবে,তারা যার যার জায়গা থেকে ভালোই করবে। 

দল হিসেবে গত এক-দেড় বছর টি-টোয়েন্টিতে আমরা ভালো করছি। এ বছর যেহেতু বিশ্বকাপ আছে, আমি আশাকরি সবাই যেন ভালো করে। একই সঙ্গে টেস্টেও আমাদের শুরুটা ভালো হয়েছে। কার সঙ্গে যেন জিতলাম!! ও নিউজিল্যান্ডের সাথে জিতলাম। আমাদের শুরুটা ভালো হয়েছে। 

এ বছর যেহেতু আমাদের অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে, সবাই যেন সেটা ভালোভাবে খেলতে পারে এবং বেশ কয়েকটা ম্যাচ যদি আমরা জিততে পারি, আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। যেহেতু এই বছর ১২-১৪টার মতো টেস্ট ম্যাচ আছে । স্বাভাবিকভাবে আমাদের জন্য এটা ভালো সুযোগ টেস্টে আমাদের একটা পয়েন্ট প্রমাণ করার। 




Post a Comment

0 Comments